প্রকাশিত হয়েছেঃ নভেম্বর ২৯, ২০২২ সময়ঃ ১২:৩১ অপরাহ্ণ

মোঃ জাকির হোসেন, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় শিং মাছের ব্যাপক মড়ক ধারণ করেছে। পাবদা গুলশাসহ অন্যান্য মাছের মড়ক থাকলেও শিং মাছের ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পেটে পানি আসা, লেজ পচা এবং ক্ষত রোগে সবচেয়ে বেশি মড়ক হচ্ছে শিং মাছে। স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন খাদ্য ও ঔষধ বিক্রেতা ডিলারদের পরামর্শও কোনো কাজে আসছে না। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মৎস্য চাষিরা। এমতাবস্থায় মাঠ পর্যায়ে নেই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের মাঠকর্মীরা। চাষিরা সঠিক পরামর্শ না পেয়ে কোনভাবেই ফেরাতে পারছে না এই শিং মাছের মড়ক। প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক চাষী ধার দেনা করে শিং মাছ চাষ করে। এই মোড়কের কারণে আজ অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
তারাকান্দা উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাঝিয়ালী, বানিহালা, লাউটিয়া, টেঙ্গুলিয়াকান্দা, হরিয়াগাই, চংনাপাড়া, রামপুর, কামারিয়া, গোপালপুর, দাদরা সহ সমগ্র উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে।
লাউটিয়া এলাকার মাছ চাষী আব্দুল আউয়াল জানান, তিনি নয় বছর ধরে মাছ চাষ করছেন তবে তিন বৎসর ধরে মাছ চাষের ব্যাপক মড়ক ধারণ করেছে। এবছর তিনি ৭ লাখ শিং মাছ চাষে দিয়েছেন দশটি পুকুরে। এই শিং মাছ ১০০ থেকে ১৫০ পিস কেজিতে আসতে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। নিজের এবং স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন খাদ্য ও ঔষধ বিক্রেতা ডিলারের পরামর্শে অনেক ঔষধ ব্যবহার করার পরেও মাছের মড়ক কোন ভাবেই ফেরাতে পারছেন না আব্দুল আউয়াল। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে এই রোগাক্রান্ত মাছ বিক্রি করতে হয়েছে। এতে তিনি ৭ লাখ মাছের মধ্যে ৪ লাখ মাছ পেয়েছেন। ফলে তার ঔষধ ও খাদ্য বাবদ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মত ক্ষতিসাধন হয়েছে। তার কাছে উপজেলা মৎস্য পরামর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পরামর্শ সম্পর্কে তার ধারণা নেই। আব্দুল আউয়াল এর মত লাউটিয়া এলাকায় একই অবস্থা মাছ চাষী রিপন মিয়া,হান্নান মিয়া, সেলিম মিয়া ও ইলিয়াছ মিয়ার।
হরিয়াগাই বাজারে ফিডের ডিলার মুফতি জামাল উদ্দিন জানান, তিনি এবছর দুইটি পুকুরে শিং মাছ চাষ করে মড়কের কারণে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
বাট্টা বাটপাড়া এলাকার বুলবুল মাস্টার জানান, তিনি বেশ কয়েকটি পুকুরে শিং মাছ চাষে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাছ ছাড়ার পর থেকে মাছের মড়ক লেগে আছে। বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেও কোন কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে তারাকান্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুরজিৎ পারিয়াল জানান, আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি এবং আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই এলাকার সকল মাছ চাষিরা আমাদের কাছে আসেন না। মাছ রোগাক্রান্ত হলে তারা স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। এই এলাকায় মাছ রোগ আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ঘনত্বে মাছ চাষ। যেখানেই তাদেরকে একক শিং মাছ শতাংশে ৬০০ থেকে ১০০০ টি চাষের কথা বলা হয়েছে। সেখানে এই এলাকার চাষিরা শতকে দুই হাজার থেকে সাত হাজার পর্যন্ত মাছ চাষে দিচ্ছেন। ফলে এ সকল পুকুরের মূলত রোগ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসার মাধ্যমে শিং মাছের এ মড়ক ফেরানো না গেলে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেমনি এই মাছের চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা। ফলে ব্যাহত হবে মৎস্য উৎপাদন। তাই সকল মৎস্য চাষিরা এ বিষয়ে সরকারি সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com