প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই ৪, ২০২৫ সময়ঃ ৮:২৭ অপরাহ্ণ

Spread the love

জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার।।

জেলার কুলাউড়ার মনু নদীর কটারকোনা বালুমহাল থেকে উত্তোলনকৃত প্রায় ২৭ কোটি টাকার বালু লোপাট করা জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন দুই ইজারাদার। আনুমানিক  দুই বছর আগে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওই বালু লোপাটের জন্য সাবেক ইজারাদার দীপক দে ও বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপির যোগসাজশে চলছে রীতিমতো লঙ্কাকান্ড। চলতি ১৪৩২ বাংলা সনে ওই বালুমহালের ইজারা পান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সেলিম আহমদের স্ত্রী নাজমুন নাহার লিপি। সাবেক ইজারাদার কুলাউড়ার দীপক দে বর্তমান ইজারাদার না হলেও ব্যবসায়িক অংশীদার গড়ে তুলে পূর্বের জমাট করা প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট বালু থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় লোকদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনের নির্দেশে গত (বুধবার) বিকেলে হাজীপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে জমাটকৃত বালুর স্তুপ চিহ্নিত করে লাল ঝান্ডা দিয়ে জব্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, মনু নদীর কটারকোনা বাজার সংলগ্ন বালুমহাল থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। গত ১৪৩০ বাংলা সনে জেলা প্রশাসন থেকে ওই বালুমহাল ইজারা নেন দীপক দে। বালু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তৎকালীন সময় স্বৈরাচারি আওয়ামীলীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে নদীর তীরবর্তী টিলাগাঁও ইউনিয়নের সালন, হাজীপুর ইউনিয়নের কনিমুড়া, হরিচক ও সাধনপুর নামকসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় কয়েক কোটি ঘনফুট বালু জমাট করেন দীপক দে। ওইসময় তিনি উত্তোলনকৃত বালু পুরোটা বিক্রি করেননি। যদিও সরকারি নিয়ম রয়েছে, ইজারার নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে উত্তোলনকৃত রাখা বালু বিক্রি কিংবা সরিয়ে না নিলে ওই বালু সরকার পরবর্তীতে নিলামে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু দীপক দে সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহারের সাথে যোগসাজশ করে স্থানীয় লোকদের সাথে ঠকবাজি করে সরকারি বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছেন।

আরো জানা গেছে, এদিকে ওই বালু মহাল রক্ষণাবেক্ষনসহ বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিপনন করার জন্য কুলাউড়ার ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিবকে গত ৮ (মে) বৈধভাবে আমমোক্তার নিয়োগ করেন বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার। পরে নাজমুন নাহার, তাঁর স্বামী সেলিম আহমদ, সহযোগী দীপক দে গং একটি বিশেষ মহল দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে আব্দুল হাছিব বাদী হয়ে কুলাউড়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি স্বত্ব (নং ১৭৯/২০২৫ইং) মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নাজমুন নাহার ও তাঁর স্বামী সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে আদালত অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। এরপর বর্তমান ইজারাদারের সহযোগী দীপক দে গংয়ের বিরুদ্ধে বালু মহাল নিয়ে বাঁধা প্রদানের পাঁয়তারা করলে বাদী আব্দুল হাছিব তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করলে আদালত দীপক দে গংয়ের বিরুদ্ধে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। বর্তমানে বাদী আব্দুল হাছিব কর্তৃক দখলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করার মর্মেও নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। এদিকে আদালত থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর গত (মঙ্গলবার) আব্দুল হাছিব গং বালু মহালের বিভিন্ন স্থানে আদালতের নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রাখে। ওই সাইনবোর্ডটি সাবেক ইজারাদার দীপক দে, হাজীপুরের বাসিন্দা সুমন আহমদসহ তাদের ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, বালুমহালের তীর ঘেঁষে অন্তত ৫-৬টি স্থানে রাখা হয়েছে বিশাল আকারের বালুর স্তুপ। উপজেলার হাজীপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে আইন অমান্য করে ১০ চাকার বালুবাহী ওভারলোড ডাম্পার ট্রাক দিয়ে অতিরিক্ত ওজনের ৩০ থেকে ৪০ টন লোডের গাড়ি দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। যার কারণে টিলাগাঁও ইউনিয়নের সালন, হাজীপুরের কনিমোড়া, হরিচক ও সাধনপুর এলাকায় সওজ, এলজিইডি, গ্রামীণসড়কসহ নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া সালন এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে বালুবোঝাই বড় গাড়ি চলাচল করায় নদীর পাড় ধ্বসে পড়ছে এমনকি সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।

অভিযুক্ত দীপক দে জানান, ১৪৩০ সনে বিভিন্ন জটিলতার কারণে স্তুপ করা বালু সময়মত সরাতে পারিনি। তাই বর্তমান ইজারাদারের সাথে অংশীদার হয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও পূর্বের উত্তোলিত বালু সরকারি উন্নয়ন কাজের জন্য অন্যত্র নিচ্ছি।

হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, পূর্বে উত্তোলিত বালুর পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। সেই বালু থেকে অবৈধভাবে সাবেক ও বর্তমান ইজারাদার যোগসাজশ করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অনেক বালু অবৈধভাবে বিক্রয় করছেন। যা এসিল্যান্ড স্যারের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত বালুর ওপর বর্তমানে লাল ঝান্ডা দিয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহরুল হোসেন বলেন, ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেই বালু নেয়ার কোনো আইনী বিধান নেই। অবৈধভাবে বালু বিক্রির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু জব্দ করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আইন অমান্য করে যদি কেউ আবার বালু নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com