প্রকাশিত হয়েছেঃ এপ্রিল ৬, ২০২৫ সময়ঃ ৭:১৩ অপরাহ্ণ
আসাদুজ্জামান ভালুকা (ময়মনসিংহ)।।
ময়মনসিংহের ভালুকায় রাতের আঁধারে বনবিভাগের অংশিদারিত্বমূলক বাগান থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক আকাশমনি গাছ কেটে চুরি করে নিয়েছে দূর্বৃত্তরা। ঘটনাটি উপজেলার হবিরববাড়ি গ্রামের খন্দকার পাড়া এলাকায় অবস্থিত মাটির ক্যাম্পের উত্তর পাশে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হবিরবাড়ি এলাকাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঘেড়া ছিলো। এক সময় প্রায় ২৪ হাজার বনভূমিতে কয়েক’শ গজারীর চালা ছিলো। তাছাড়া বিভিন্ন ভিটায় অবস্থিত বিশাল আকারের চালাগুলো বনবিভাগের উদ্যোগে অংশিদারিত্বমূলক (পার্টিসিপেন্ট) বাগান করা হয়। বাগানগুলোর মাঝে বেশিরভাইগই ছিলো আকাশমনি গাছ। কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী চক্র ও ভূমিদস্যূরা রাতের আধাঁরে কাছ কেটে নিয়ে এমনকি আগুন জ¦ালিয়ে বহু এলাকা বিরানভূমিতে রূপান্তর করে এবং নিজেদের দখলে নিয়ে ও ভূয়া কাগজপত্র তৈরীর মাধ্যমে অসাধূ শিল্প মালিকদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। এরই ধারাবাহিকায় বেশ কিছুদিন ধরে হবিরবাড়ি মৌজার ৭৯৯ নম্বর দাগে খন্দকার পাড়া এলাকায় অবস্থিত মাটির ক্যাম্পের উত্তার পাশে বনবিজ্ঞপ্তিত ভূমিতে প্রায় ১২-১৩ বছর আগে রোপন করা অংশিদারিত্বমূলক (পার্টিসিপেন্ট) বাগানের বিশাল বিশাল আকাশমনি গাছ কেটে নিচ্ছে দূর্বৃত্তরা। এতে বিরান ভূমিতে পরিনত হতে যাচ্ছে ওই চালাগুলো।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার সর্তে জানান, একটি ভূমিদালাল চক্র ওই চালাটি গাছশূন্য করার জন্য রাতের আঁধারে গাছগুলো কেটে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। ওই চক্রটি হয়তো পরবর্তিতে ওই জমিটি দখলে নিয়ে প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করে দিবে। অভিযোগে জানা যায়, ওই এলাকার চারপাশে গজারী বাগানে ঘেরা জয়নউদ্দিনের ভিটায় এক প্রভাবশালী অবৈধ করাতকল বসিয়ে রাতের আঁধারে এসব আকাশমনি গাছগুলো চেরাই করে অন্যত্র বিক্রি করছেন। কাঠের বেপারী কাশেম, মিজান, সুমনসহ আরো বেশ কিছু কাঠ ব্যবসায়ী এসব গাছ কাটার সাথে জড়িত থাকতে পারেন এবং এসবের সাথে বনবিভাগের অসাধূ ব্যক্তিরা জড়িত। তারা আরো জানান, বনবেষ্টিত স্থানে করাতকল বসিয়ে প্রকাশ্যে গাছ চেরাই হলেও রহস্যজনক কারণে বনবিভাগ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল বলেন, ভালুকা রেঞ্জের আওতায় বনবিভাগের এইসব মূল্যবান জায়গাগুলো থেকে গাছ চুরির নেপথ্যে ভূমি দখল ও বিক্রির উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের উচিত অতি দ্রæত ওই সকল খালি জায়গাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা।
ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম সাজ্জাত গাছ কাটার কথা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। তবে ওই চালা থেকে কতগুলো গাছ কাটা হয়েছে, তা তদন্ত করে বলতে পারবেন বলে ওই কর্মকর্তা বলেন। করাতকলের ব্যাপারে তিনি জানান, অনেকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে করাতকল উচ্ছেদের ব্যাপারে। কিন্তু ইউএনও মহোদয় কোন ধরণের সহযোগীতা করছেন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ জানান, গাছ কাটার বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। তাছাড়া ঈদের আগেই করাতকল উচ্ছেদের বিষয়ে অভিযানে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সময়ের অভাবে তা হয়ে উঠেনি। অচিরেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।