প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ৩১, ২০২৩ সময়ঃ ২:২৪ অপরাহ্ণ

Spread the love
মোঃ সিরাজুল মনির বিশেষ প্রতিনিধি।।

জমি সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বপ্নের বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট অবশেষে বাস্তবের পথে। বলা যায়– চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের এ বার্ন ইউনিট এখন আর স্বপ্ন নয়। অচিরেই এটি বাস্তবে রূপ পাচ্ছে।

দেড়শ শয্যার বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট স্থাপনে গতকাল (৩০ মার্চ) দুপুরে চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কো–অপারেশন এজেন্সির ভাইস চেয়ারম্যান ডেং বুকিং–এর উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুপক্ষের মাঝে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও চীনের পক্ষে ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন চুক্তিতে সই করেন।

এসময় অন্যান্যের মাঝে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সারাদেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান সহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চীনের পক্ষে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

চুক্তি অনুযায়ী– বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট হবে দেড়শ শয্যার। এর মাঝে ১০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২৫টি এইচডিইউ এবং অত্যাধুনিক তিনটি অপারেশন থিয়েটার থাকবে। জরুরি বিভাগের পাশাপাশি বর্হিঃবিভাগও থাকবে। প্রাথমিকভাবে ৬ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। তবে ভবনের ভিত্তি হবে ৮ তলা বিশিষ্ট। ভবনের প্রতি ফ্লোরে স্পেস থাকবে ১৬ হাজার বর্গফুট। বার্ন ইউনিটের ৬ তলা এই ভবনের পাশাপাশি ইক্যুইপমেন্ট (সরঞ্জাম) স্থাপনের জন্য একতলা বিশিষ্ট আলাদা আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হবে। একতলা ভবনটিতে অঙিজেন প্ল্যান্ট, সাব–স্টেশন ও জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে। প্রায় এক একর জায়গার উপর বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট গড়ে তোলা হবে।

পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার (চীনা টাকায় প্রায় ১২০ মিলিয়ন ইউয়ান) ব্যয় নির্ধারণ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এর শতভাগই অনুদান সহায়তা। অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট করে দেবে চীন। বার্ন ইউনিটের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির সবই তারা দেবে।

চট্টগ্রামে বিশেষায়িত একটি বার্ন ইউনিট স্থাপনে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে চেষ্টা করছেন সারাদেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন। গতকাল আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডা. সামন্ত লাল সেন আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট হোক, এই স্বপ্ন আমার বহু দিনের। প্রায় ৯ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝখানে বিভিন্ন জটিলতায় এটি অনেকটা থমকে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত এবার হচ্ছে। আমার দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। এটি অনেক বড় বিষয়। আমি আনন্দিত। চট্টগ্রামে বিশেষায়িত এই ইউনিটটি হলে অনেক পোড়া রোগী দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা সেবাটা পাবে। এখন চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় একটু বেশি পোড়া রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়। আনার পথেও অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। এই বিষয়টি আমার খুব মর্মান্তিক লাগে। বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটটি দাঁড়িয়ে গেলে চট্টগ্রামের রোগীদের আর ঢাকায় আনার প্রয়োজন পড়বে না। এটাই এখন আমার চাওয়া।

আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হওয়ায় চীনের পক্ষ থেকে এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, বার্ন ইউনিটের জন্য নির্ধারিত জায়গা গোঁয়াছি বাগান এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ বসতি ও স্থাপনা ছিল। এখন এসবের কিছু নেই। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এসব স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন জায়গাটি কাজ শুরুর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তাই কাজ শুরু করতে কোনও সমস্যা নেই। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে চীনের একটি টিম পুনরায় চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে। তারা জায়গাটি পুনরায় সার্ভে করবে। চুক্তি সই হওয়ায় তারা এখন চীন থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আনার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছেন।

চীনা কর্তৃপক্ষ আগামী ২ বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিটের সেবা চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বলেও জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

এর আগে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটের প্রস্তাবিত ডিজাইনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে চমেক হাসপাতাল ও চীনা প্রতিনিধি দলের মধ্যে ‘ইন্সপেকশান মিনিটস’ শীর্ষক সমঝোতা সই হয়।

গত ১১ মার্চ দুপুরে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ওই সমঝোতায় চমেক হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান এবং চীনা প্রতিনিধি দলের পক্ষে টিম লিডার নিং টিংলং সই করেন। চীনের পক্ষে ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসের ইকোনমিক ও কর্মাশিয়াল অফিসের সেকেন্ড সেক্রেটারি শি চেন ও চীনা টিমের সদস্য লিও বো সাথে ছিলেন। সমঝোতা সই অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ডা. সামন্ত লাল সেন।

আনুষঙ্গিক বিষয়ের মধ্যে বার্ন ইউনিটের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা, প্ল্যানিং, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সামগ্রিক ডিজাইন রয়েছে। মোটকথা চীনের অর্থায়নে দেড়শ শয্যার এই বার্ন ইউনিটে কি কি থাকবে– তা নিয়ে দুই পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছানোর পর এ সমঝোতা সই হয়।

গতকাল ঢাকায় আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ঢাকার মতোই চট্টগ্রামেও আগুনজনিত বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এজন্য চট্টগ্রামে ঢাকার মানের একটি র্বান ইনস্টটিউিট প্রয়োজন ছিল। ১৫০ শয্যার এই বার্ন ইউনিট চালু হলে ঢাকায় চাপ কিছুটা কমবে। এর পাশাপাশি নতুন করে আরও পাঁচ বিভাগে বার্ন ইউনিট নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com