প্রকাশিত হয়েছেঃ জুন ১৩, ২০২২ সময়ঃ ৫:৫০ অপরাহ্ণ

এম এস মনির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব‍্যুরো প্রধান।।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮ জন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হলে ডিপোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে করা আট আসামির সবাই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন।
অথচ মামলার পাঁচ দিন পার  হলেও এখনো আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে পুলিশ বলছে, মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এদিকে ডিপোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় এসব পরিবারের স্বজনেরা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ ছিদ্দিকী বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেন। মামলার আসামিরা হলেন,  বিএম কনটেইনার ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ,ডিপোর শেডের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম ও  মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের অবহেলার কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

পুলিশের করা মামলার এক নম্বর আসামি নুরুল আক্তার নগরের বেসরকারি মেট্টোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে নুরুলের বাম হাত থেকে মাংস খসে পড়ে এবং তিনি পায়ে গুরুতর আহত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুরুল আক্তারকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নুরুল আক্তারের সেজো ছেলে  ইয়াছির আনোয়ার  বলেন, ইতিমধ্যে আব্বুর বেশ কিছু সার্জারি করা হয়েছে, পায়ের সার্জারি এখনও বাকি আছে। উনার কেটে যাওয়ার পায়ের অংশে  ইনফেকশন না হওয়ার জন্য শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাংস নিয়ে সার্জারি করে বসানো হবে। চিকিৎসকরা বলছেন তিনি মোটামুটি সুস্থ আছেন। তবে কোনো ভাবেই যেনো জ্বর না আসে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলছে। জ্বর আসলে তার অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে।

মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলাটি উনার নামে করা ঠিক হয়নি। ঘটনায় ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে কীভাবে মামলা করা হয়? কোথা থেকে, কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি তদন্ত করে দোষীদের  আসামি করা হোক।  ঘটনাটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতো এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। উল্টো অবহেলার কথা বলে আব্বুকে আসামি করা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনার পর পরিবারের সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এমন অমানবিক ঘটনা কীভাবে আমাদের সঙ্গে করা হলো।

আগুন নেভাতে গিয়ে মামলার দুই নম্বর আসামি ডিপোর  ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমানের শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিটিউটে ভর্তি আছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ/ ৪ দিন পর পুলিশের মামলা, আসামি ৮ তার মেয়ের জামাই নজরুল ইসলাম বাবু চিকিৎসকের বরাত দিয়ে  বলেন, তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকরা বলছেন এসব রোগী যে কোনো মুহূর্তে ফল ডাউন করতে পারে। উনারা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি পুরোটাই অমানবিক। তিনি বাসায় ছিলেন। উনি ঘটনাস্থলে না গেলেও পারতেন। তবুও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তিনি কাজ করতে ছুটে গিয়েছেন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের সময় মামলার সংবাদটা আসলো। সবাই মানসিকভাব বিপর্যস্ত। উনার শরীর ও মামলা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আমি নিজেও পেশায় একজন আইনজীবী। এখন যেহেতু মামলা হয়ে গেছে। উনি সুস্থ হয়ে উঠার পর আমরা আইনীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এছাড়াও মামলা অন্য আসামিরা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে।

যা বলছে পুলিশ:

এদিকে পুলিশের বাদী করা মামলাটি তদন্ত করছেন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক শ্রী সুমন চন্দ্র। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামিরা কোথায় ভর্তি আছেন, চিকিৎসাধীন আছেন এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। আমরা খোঁজ-খবর  মামলার এক ও দুই নম্বর আসামির চিকিৎসার বিষয়টি তুলে ধরার পর পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কোনো চিকিৎসকের কাগজপত্র আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।

২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুই কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটি গড়ে তোলা হয়। এর মালিকানায় রয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠানর স্মার্ট গ্রুপ। ডিপোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ঘটনার পর থেকেই তিনি নিশ্চুপ।

বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকলেও বিষয়টি জানানো হয়নি। যার কারণে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ এত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকি অভিযানের বেশ কয়েক ঘণ্টা মালিকদের কাউকে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com