প্রকাশিত হয়েছেঃ নভেম্বর ১৬, ২০২৫ সময়ঃ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ

Spread the love
  1. জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার।।

চা-বাগানের সবুজ ঢেউ, হাওরের নীল জলরাশি আর পাহাড়ের কোলজুড়ে ঝর্ণার সুর-এসব মিলেই গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজার জেলার অপার সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে জুড়ী নামক এক অনন্য সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে জুড়ী হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র, যদি পায় একটু পরিকল্পিত উন্নয়নের ছোঁয়া।

জুড়ীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রত্নভাণ্ডারে রয়েছে হাকালুকি হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি, যেখানে বর্ষায় নৌভ্রমণ আর শীতে পরিযায়ী পাখিদের কিচিরমিচির সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। হাওরের জলসৌন্দর্যের পাশাপাশি পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টে রয়েছে অসংখ্য ঝর্ণা-সীতাকুণ্ড, মায়াবন, মায়াকানন, সন্ধানী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিষকরম।

এছাড়া রয়েছে হাতিনালা গিরিখাত, লাঠিটিলার ঐতিহাসিক ব্রিটিশ আমলের আয়রন ব্রিজ, ধসেল পাহাড়ের শিবমন্দির, কাশ্মির টিলা, লালছড়া ও হায়াছড়া কমলা বাগান, সাগরনালের হাড়ারগজ সংরক্ষিত বন এবং সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ চূড়া কালাপাহাড়।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবনধারা, মনিপুরিদের তাঁতশিল্প ও সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে জুড়ীকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ফলে, এই বিপুল সম্ভাবনাময় জুড়ীর পর্যটন শিল্প এখনো মূলধারায় আসতে পারেনি। জানা গেছে, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি ও পরিকল্পনার অভাব এর অন্যতম কারণ।

উপজেলায় নেই মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা, পর্যটকবান্ধব রেস্টুরেন্ট বা নিরাপদ খাবার হোটেল। বর্ষায় অনেক স্থান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পর্যটন এলাকাগুলোতে নেই দিকনির্দেশক সাইনবোর্ড, তথ্যকেন্দ্র কিংবা পর্যটক সহায়তা সেবা। এসব কারণে অনেকেই জুড়ীর পর্যটন সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগতই নন।

স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তা ও পিক অ্যান্ড গো ট্যুরিজম-এর প্রতিষ্ঠাতা শাকিল আহমেদ জানান, সরকার যদি জুড়ীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং স্থানীয়ভাবে গাইড প্রশিক্ষণ, প্রচারণা, রোড ম্যাপ তৈরি, পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকো ট্যুরিজম) নিশ্চিত করে, তাহলে এই এলাকা খুব দ্রুত পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, পর্যটন কেবল বিনোদনের বিষয় নয় এটি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত। জুড়ীতে পর্যটন শিল্প বিকাশ ঘটলে স্থানীয় কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পরিবেশ সংরক্ষণের নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

উদীয়মান লেখক হাফেজ শামসুল  ইসলাম বলেন, জুড়ীর সৌন্দর্য শুধু প্রাকৃতিক নয় এখানে মিশে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জীবনবোধের অনুপম ছোঁয়া। যথাযথ পরিকল্পনা ও সরকারি স্বীকৃতি পেলে জুড়ী একদিন বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠবে।

পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক জুড়ীর পরিবেশ ও কৃষির জন্য ভয়াবহ হুমকি। আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহার করে একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ জুড়ী গড়ে তুলতে পারলে পর্যটনও হবে আরও টেকসই।

এদিকে, প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে জুড়ীর পর্যটন উন্নয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, জুড়ীতে পর্যটন অবকাঠামো এখনো সীমিত। পাথারিয়া বনাঞ্চল সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে প্রবেশে কিছু বিধিনিষেধ আছে। তবে হাকালুকি হাওর ও আশপাশের প্রাকৃতিক সম্পদ ঘিরে সমন্বিত পর্যটন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে, প্রকৃতি, পাহাড়, হাওর, ঝর্ণা, ইতিহাস ও সংস্কৃতির সম্মিলনে জুড়ী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের এক অমূল্য সম্পদ। সঠিক পরিকল্পনা, সরকারি স্বীকৃতি ও স্থানীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই উপজেলা সহজেই রূপ নিতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন হবে।
সময় এসেছে প্রকৃতি সংরক্ষণ আর টেকসই উন্নয়নের সমন্বয়ে সবুজ-স্বর্গ জুড়ীকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তোলার।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com