প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই ২৯, ২০২৪ সময়ঃ ৮:৩৩ অপরাহ্ণ

আসাদুজ্জামান ভালুকা (ময়মনসিংহ)।।
বাবার জমিজমার পরিমাণ ছিলো মাত্র এক একর, তার মাঝেও রয়েছে বনবিভাগের দাবি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি থাকায় বড় ভাইয়ের আশ্রয়ে থেকে জামালপুর থেকে এসএসসি পাশ করেন মোক্তাদির। পরে পুলিশের সিপাহি পদে চাকরি নেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ করেন এবং পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের এএসআই হিসেবে ঢাকায় বদলী হন। গত শনিবার (২০ জুলাই) সকালে বাসা থেকে কর্মস্থল পল্টন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ি রায়েরবাগ এলাকায় পৌঁছলে কোটা বিরোধী বিক্ষোভকারীদের হাতে তিনি নৃশংসভাবে খুন হন। সোমবার (২১ জুলাই) পুলিশ কর্মকর্তা মোক্তাদিরকে ভালুকার আঙ্গারগাড়া গ্রামে তার পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। মেডিক্যালে পড়ূয়া একমাত্র ছেলের স্বপ্নপূরণ দেখা হলোনা মোক্তাদিরের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার আঙ্গারগাড়া গ্রামের মৃত মোকসেদ আলীর সাত ছেলের মাঝে ষষ্ঠ ছেলে মোক্তাদির চাকরির সুবাদে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায়। গত শনিবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসা থেকে কর্মস্থল পল্টন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্দেশে বের হন। পথিমধ্যে যাত্রাবাড়ি রায়েরবাগ এলাকায় পৌঁছলে কোটা বিরোধী বিক্ষোভকারীরা তাঁকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর মরদেহ রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর দুই পায়ে রশি বেঁধে, মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর ব্রিজের নিচে বহু মানুষ উল্লাস করছে। পরে জানা যায়, সেই হতভাগ্য ব্যক্তিই মোক্তাদির।
মোক্তাদিরের মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মাহফুজ রহমান তন্ময় বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ডিএমপির কদমতলী থানা থেকে এসআই আল আমিন ফোন করে বাবার মৃত্যুর খবর জানান। একটা সুস্থ মানুষ বাসা থেকে বের হলো। কিছুক্ষণ পরেই এলো তার মৃত্যুর খবর! ওই পুলিশ অফিসার জানান, বিক্ষোভকারীরা বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তোরা আমার বাবাকে মেরেই যখন ফেললি, তখন মরদেহ ব্রিজে ঝুলিয়ে কেন কষ্ট দিলি?’ বাবার এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবরে আমার মা নিরা আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’ পরে মা ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাই কদমতলী থানায়। তার আগেই পুলিশ তাঁর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যায়।
তিনি আরো  বলেন, ‘থানার একজন অফিসারের ফোনে ছবি দেখে বোঝার উপায় ছিলোনা এটা আমার বাবা। একাধিক আঘাতের চিহ্ন এবং মাথার খুলি তিন খন্ড অবস্থা। এটা মেনে নেয়ার মতো না। মানুষ হয়ে মানুষকে এভাবে মারতে পারে? সারাজীবন বাবা মানুষের জন্য কাজ করলো। আজ সেই মানুষের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হতে হলো!’
স্মৃতিচারণ করে মাহফুজ বলেন, ১৯ জুলাই অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তার বাবা। কিন্তু আন্দোলনের কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিলোনা। সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বাসায় চলে আসেন বাবা। ওইদিন শুক্রবার থাকায় পরিবারের সবাই মিলে অনেক আড্ডা দেন। কে জানত, এটাই হবে শেষ পারিবারিক আড্ডা! ঘটনার আগের রাতে বাবাকে বলি, ‘এতো ঝামেলার মধ্যে কী করে অফিসে যাবেন? বাবা হাসতে হাসতে বললেন, তোমরা পড়ালেখা করো। আমার অসুবিধা হবে না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহফুজ বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার কাছে শুনেছি, আমার বাবাকে নাকি সাপের মতো পিটিয়ে মেরেছে। তার পর যাত্রাবাড়ি রায়েরবাগ এলাকায় ফুট ওভারব্রিজে তাঁর মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা। হামলার ভয়ে আমার বাবা বাসা থেকে পুলিশের পোশাক পরেননি। শপিং ব্যাগে পুলিশের পোশাক নিয়ে বের হন। তারপরও ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না!
এএসআই মোক্তাদির নিজের পরিবার নিয়ে ঢাকায় মাতুয়াইল এলাকায় থাকতেন। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে মাহফুজ বড়। তিনি উত্তরার বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বোন মালিহা তাবাসুম ওরফে মুন মাতুয়াইল এলাকার শামছুল আলম খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরু থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) থেকে এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com