প্রকাশিত হয়েছেঃ মে ১৮, ২০২৪ সময়ঃ ২:১৩ অপরাহ্ণ

আসাদুজ্জামান ভালুকা (ময়মনসিংহ)।।
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলাধীন আঙ্গারগাড়া ইন্তারঘাট এলাকার বৃদ্ধা সামর্থ বানু ৯০ বছর বয়সে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। টিন ও তালপাতা দিয়ে মোড়ানো একটি খুপরি ঘরে সহায়সম্বলহীন এই বৃদ্ধা এখানো মানুষের বাড়ি বাড়ি সাহায্য চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বহু চেষ্টা করে গত দু’বছর আগে একটি বিধবাভাতার কার্ড পেলেও বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি ওই টাকাটাও উত্তোলন করতে পাচ্ছেন না।
বৃদ্ধা সামর্থ বানুর সাথে কথা বলতে গেলে, তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পরিস্থিতির কাছে তিনি পরাজিত, জীবনে বেঁচে থাকা তার কাছে শুধুই যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই না। এখন আল্লাহর কাছে তিনি শুধু একটাই প্রার্থনা করেন তাড়াতাড়ি যেন তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু তার একমাত্র মুক্তির পথ।
তিনি আরো বলেন, ৪০ বছর আগে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে তার স্বামী হাসমত আলী মুন্সী দুই বছর অসুস্থ অবস্থায় ঘরে পড়ে থেকে অর্থের কারণে চিকিৎসার অভাবে মারা যান। তখর তার পেটে ছোট মেয়ে ফাতেমা। তখন থেকেই তাকে জীবনযুদ্ধে নামতে হয়েছে। ছেলে মেয়েরা ছোট থাকার কারণে পেটে সন্তান নিয়েই পরের বাড়িতে কাজ করে ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা চেয়ে তার সংসার চালাতে হয়েছে। বর্তমানে বড় ছেলে সিরাজ উদ্দিন (৭৫) মানসিক রোগী ও অপর ছেলে শুক্কুর আলীর সংসারও চলে খুব অভাবঅনটনে। তাই তারাও তার কোন খোঁজ খবর নেয়না। তাছাড়া চার মেয়েন বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন অপারক হয়ে কিছু পুরাতন টিন ও তালপাতার বেড়ার খুপরি ঘরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অনেক কষ্টে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
বৃদ্ধা সামর্থ বানু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে এই প্রতিনিধিকে বলেন, তার বাবার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার মঠখলা গ্রামে। বাবা ইয়াসিন ব্যাপারীকে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বিহারীরা গুলি করে হত্যা করে। তারাও এক ভাই ও ছয় বোন ছিলেন। বর্তমানে অনেকেই পরপারে চলে গেছেন। তিনিও তার বাবাকে খুনের প্রতিশোধ হিসেবে দেশ স্বাধীনের জন্য অভাবের সংসারে থেকেও অসুস্থ স্বামীকে ঘরে রেখে বাড়িতে ১০/১২ টি চুলা তৈরী করে দেন। আর ওইসব চুলায় বিহারীদের ভয়ে বাড়ি থেকে চলে আসা উপজেলার চাঁনপুর ও মল্লিকবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন রান্না করে খাওয়া ধাওয়া করতেন। আর তিনি রাস্তায় পাহারা দিতেন। যুদ্ধ থামার পর ওইসব লোকজন তার বাড়ি ছাড়েন।
প্রতিবেশীরা জানান, যে ঘরে এই বৃদ্ধা বাস করছেন, সেখানে খাবার তো দূরের কথা, পানযোগ্য পানি পর্যন্ত নেই। অনেক সময় দেখা যায়, ভাঙ্গা পাত্রে জমে থাকা বৃষ্টির পানিও তিনি ব্যবহার করছেন। কয়েক বছরের বহু চেষ্টায় তার ছোট মেয়ে ফাতেমা একটি সরকারী টিউবওয়েল বরাদ্দ পেয়েছেন, কিন্তু এখনো তা স্থাপন করা হয়নি। তাছাড়া বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা না থাকায় টিউবওয়েলটি স্থাপন করা হলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। এদিকে মানুষের বাড়িতে চেয়ে একবেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা না খেয়ে দিন কাটে বৃদ্ধা সামর্থ বানুর। অসুস্থ হলেও খোঁজ নেবার কেউ নেই। প্রতিনিয়তই তিনি, কষ্ট-যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে শুধুই মৃত্যু কামনা করেন।
এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে বলেন, এই দুঃখিনী বৃদ্ধা এই ঝড়বৃষ্টির দিনে একটুকরা ভূমিতে ভাঙাচোরা খুপরি ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও প্রশাসন থেকেও কেউ তার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। তাছাড়া এই এলাকায় বহু দানবীর ও প্রভাবশালী লোকজন থাকার পরও তার খেয়ে না খেয়ে প্রতিনিয়তই মৃত্যু কামনা করে দিন পার করতে হচ্ছে।
বৃদ্ধা সমর্থ বানুকে বিদ্যুৎ ও ঘরের ব্যবস্থাসহ দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য ভালুকা উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় এমপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি এলাকাবাসী জোর দাবি জানান।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com