প্রকাশিত হয়েছেঃ আগস্ট ৭, ২০২৩ সময়ঃ ৮:২২ অপরাহ্ণ
॥ রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি ॥
অব্যাহত ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও সড়কে পাহাড় ধসেস্বাভাবিক যান চলাচলে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানিরউচ্চতা বাড়ায় কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছে। দূর্ভোগে পড়েছে শত শত লোকজন। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় রাস্তাঘাট ডুবেগিয়ে লোকজন চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। রাঙ্গামাটি–চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তারউপর মাটি ধসে পড়ে এবং গাছ উপড়ে পরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। প্রশাসনের তদারকিতে দ্রুতসময়ের মধ্যে এসব মাটি ও গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
এদিকে, অব্যাহত টানা বর্ষণের ফলে রাঙ্গামাটির নয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ওবন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাঙ্গামাটিতে সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আর ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এইসবউপজেলার অন্যান্য এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয়রা। এইসবউপজেলাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেআশ্রিতদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার বলেন, বাঘাইছড়িতে টানা ভারী বর্ষন ওউজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলার কাঁচালং নদীর পানি বেড়ে এরইমধ্যে নিচু অঞ্চল সমূহ প্লাবিত হতে শুরু করেছে। উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করেঙ্গাতলীসড়ক ও পৌর এলাকার উগলছড়ি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বাঘাইছড়ি ইউনিয়নেরউগলছড়ি, বেপারী পাড়া, নিউলাইল্ল্যা ঘোনা এবং পৌরসভার বটতলী, মাদ্রাসা পাড়া, হাজীপাড়ার কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণের ফলে মারিশ্যা–দীঘিনালা সড়কেদুইটিলা এলাকায় দুইবার পাহাড় ধসের ঘটনায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক জনপদবিভাগ প্রায় ২ ঘন্টার চেষ্টায় যান চলাচল স্বাভাবিক করে তোলে।
এছাড়া বন্যার আশংকায় উপজেলা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পাহাড়ের পাদদেশেঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আনসারভিডিপির সদস্যদের উদ্ধার কাজে মাঠে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, জুরাছড়ি উপজেলা টানা ভারী বর্ষনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আউশ মৌসুমে ২০২হেক্টর জমির রোপিত ধান ও প্রায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়াগেছে।
জুরাছড়ির দুমদুম্যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, জুরাছড়ি ইউনিয়নেরলুলাংছড়ি, সাপছড়ি, সীতারামপাড়া, মিতিংগাছড়ি, ডেবাছড়া কুসুমছড়ি, বালুখালী, মধ্যভিটা, শীলছড়ি, ঘিলাতলী বনযোগীছড়া ইউনিয়নে বহেরাছড়ি, ধামাইপাড়া, ছোট পানছড়ি, বেকাবেক্যা, শুকনাছড়ি, চুমাচুমি, মৈদং ইউনিয়নের পানছড়ি, ভুয়াতলী, জামের ছড়ি, হাজাছড়ি, বারাবান্যা দুমদুম ইউনিয়নে ডানেতেছড়ি, বস্তিপাড়া, বরকলক, করইদিয়া, চাম্পাইপাড়া ওগবছড়ি বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল নামায় নিম্ন অঞ্চলে বসবাসরতদের আতংকেরয়েছে।
জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির এলাকাপরির্দশন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদেন সহায়তায় তালিকা তৈরীর করে জেলা প্রশাসকের নিকটপ্রেরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বড় ধরনেন ক্ষয়ক্ষতির এরাতে পুলিশ ও উপজেলাপরিষদের একটি টিম মাঠে কাজ করছে।
অন্যদিকে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ী এলাকা রাজস্থলীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েপড়েছে। রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের হাজীপাড়া যাওয়ার রাস্তার বেইলি ব্রিজটিপানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসেরআশংকায় পাহাড়ের নিজস্ব বসবাসরতদের নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরাতে এবং সতর্ক করতেউপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা বলেন, বাঙ্গালহালিয়াডাকবাংলা পাড়ায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাঙ্গালহালিয়া বাজারসহ দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের পিছনের দিকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েপড়েছে। তবে বড় ধরনের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান।
এদিকে, রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় মাটি ধসে কয়েকটি বসতঘর ধসেপড়েছে। রাইখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এসএম নাছির উদ্দীন জানান, রাইখালী রিফিউজি পাড়া, বড় ঝিরিপাড়া ও রাইখালী বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে টিুট, ভট্ট, জাহাঙ্গীর আলম, আজিম, আবদুর রশীদ, হারুন ও নেজামের ৮টি ঘর পাহাড় ধসে সম্পূর্ণবিধ্বস্থ হয়েছে। বড়ইছড়ি কাপ্তাই ক্লাবের পাশের অনিল তনচংগ্যা ও চিৎমরম সিড়িঁঘাট এলাকারআরও ২টি ঘর বিধস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান মংক্যমারমাকে অবগত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃমহিউদ্দিন জানান, রাইখালীর ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের খবর জানতে পেরেছেন।ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান বলেন, একটি প্রাণওযাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে তার জন্য বৃষ্টির মধ্যে সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে প্রশাসন উদ্ধারতৎপরতায় মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলউপজেলা গুলোকেও ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরও উপজেলায় মোট ১৮২ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের খাবার ব্যবস্থাওকরা হয়েছে বলে তিনি জানান।
#