প্রকাশিত হয়েছেঃ অক্টোবর ১৪, ২০২৪ সময়ঃ ৫:১৬ অপরাহ্ণ

Spread the love
আসাদুজ্জামান ভালুকা (ময়মনসিংহ)।।
ময়মনসিংহের ভালুকা রেঞ্জের আওতায় কাদিগড়, হবিরবাড়ি ও মল্লিকবাড়ি বিটে বনায়নের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে রোপনকৃত চারা উপড়িয়ে ফেলার অভিযোগ এনে স্থানীয় কৃষকদের নামে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, স্বারকলিপি ও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ভালুকা রেঞ্জের আওতায় কাদিগড়, হবিরবাড়ি ও মল্লিকবাড়ি বিটে ২০০ একর বনায়নের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু হবিরবাড়ি ও কাদিগড় বিটে প্রায় ১০ একর বনায়ন করা হয়। তাছাড়া মল্লিকবাড়ি বিটের আওতায় কোন চারাই রোপন করা হয়নি। হবিরবাড়ি মৌজার ৭৯৯ নম্বর দাগে ৮ একর জমিতে ৮ হাজার চারার বনায়নের দাবি করা হলেও দেড় একর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বনায়নের জন্য কাদিগড় বিট অফিসে উৎপাদিত চারাগুলোর বেশিরভাগই নার্সারীতে রয়ে গেছে এবং কিছু চারা লাগানোর জন্য নার্সারী থেকে উত্তোলন করা হলেও তা লাগাতে না পারায় নার্সারীতেই শুকাচ্ছে। অপরদিকে চারা উপড়িয়ে ফেলার অভিযোগ এনে বনবিভাগ স্থানীয় কৃষকদের নামে একের পর মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভূক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন। হয়রানীমূলক মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার, বনবিভাগের অসাধূ ব্যক্তিদের চাঁদাবাজি, ঘুষবাণিজ্য বন্ধ ও ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন উর রশীদ খান ও কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খানকে প্রত্যাহার ও বিচার দাবিতে প্রতিবাদে এবং ১৯৮৩ ও  ১৯৯২ সালের গ্যাজেট বাতিলের দাবিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এলাকার কয়েক হাজার নারী পুরুষ উপজেলার সিডষ্টোর বাজার এলাকায় ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও ইউএনও বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গেলে স্থানীয় কৃষক তোফায়েল ইবনে জামাল জানান, পাড়াগাঁও মৌজার ২৭২, ২৯০ ও ২২৭ নম্বরসহ বেশ কয়েকটি দাগে অল্প কিছু জমিতে বনায়ন করা হয়। বনায়নকৃত ওইসব জমি আরওআর রেকর্ডমূলে তাদের শত বছরের দখলীয় এবং দাদার আমল থেকে ভোগদখলে আছেন। ১৯৮৩ সালে কিছু জমি বনবিভাগের চয়েস তালিকাভূক্ত করা হয়। কিন্তু ডিমারগেশন ছাড়াই গত ২ অক্টোবর ওইসব জমিতে বনবিভাগ চারা লাগাতে আসলে, এলাকাবাসি তাতে বাঁধা দেন। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বনবিভাগ থানায় দুইটিসহ আদালতে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ৮/১০ টি মিথ্যে মামলা দায়ের করে। আরো মামলা দেয়া হবে বলে হুমকী দেয়া হচ্ছে।
জমির মালিক মো: টিপু সুলতান জানান, পাড়াগাঁও মৌজার ২৯০ ও ২২৭ নম্বর দাগে এক্সিল্যান্ড সিরামিক ও টাইলস ফ্যাক্টরী, ৯৮৮ ও ১০৩৯ নম্বর দাগে বেস্টওয়ে গ্রæপ, ফিনিক্স গ্রæপ, হামিদ এগ্রো, রানার অটো, এনডিই ও ডেবোনিয়ার প্যাডিংসহ বেশ কয়েকটি চলমান ও প্রস্তাবিত কারখানার দখলে শতাধিক একর বনভূমি থাকলেও ওই সকল ফ্যাক্টরীর ভেতর খালি জায়গাগুলোতে রহস্যজনক কারণে বনায়ন বা তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।
বনবিভাগের দায়েরকৃত ৫ মামলার আসামী মো: নাছির উদ্দিন জানান, পাড়াগাঁও মৌজার বেশ কয়েকটি দাগে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ একর জমিতেও বনায়ন করা হয়নি। অথচ জানা গেছে, ভালুকা রেঞ্জে ১৭৭ একরের উপরে বনায়ন করা হয়েছে। আর এসব বনায়ন দেখিয়ে ভালুকা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: হারুন উর রশীদ খান ও কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। আর এদিকে টাকা জায়েজ করার কৌশল হিসেবে বিএনপির কর্মী সমর্থক বলে তাদের প্রায় ২৪ জন জমির মালিকের বিরুদ্ধে ১৫ দিনে ১০ টির উপরে মিথ্যো মামলা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন উর রশীদ খান প্রায়ই বলতেন, তার ছেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ছেলের কথা বলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীসহ নিরীহ কৃষকদেরকে নানা ভাবে ভয় দেখাতেন । তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি আ’লীগের দূষর হিসেবে ভালুকা রেঞ্জের দায়িত্বে থেকে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের মিথ্যে ও হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রণালয় অথবা বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেই এই দুর্নীতির সত্যতা বেরিয়ে আসবে এতে সরকারের কোটি টাকা রক্ষা পাবে। অন্যথায় বন বিভাগের দায়সারা তদন্ত হলে সরকারের টাকা ভাগাভাগি হবে। সরকারি এই বিপুল অর্থ রক্ষায় সঠিক তদন্ত ও সেই সাথে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন হয়রানীর শিকার স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসী, পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল।
একাধিক জমির মালিক জানান, চারা লাগাতে বাঁধা দেয়ায় স্থানীয় কৃষক রুবেল মিয়ার নামে একটি, রফিকুল ইসলামের নামে ৪ টি, আব্দুল আজিজের নামে ৪টি ও ভাই মোতালেব মিয়ার নামে ৬ টি, সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলামের নামে থানায় একটি মামলা দেয়া হয়। তাছাড়া স্থানীয় কৃষক মোস্তফা কামাল, উসমান গনি, জিল্লুর রহমান, রফিকসহ অনেকের বিরুদ্ধে গাছের চারা উপড়ে ফেলার অভিযোগ এনে বন আইনে মিথ্যে মামলা দেয়া হয়। অথচ ২৭২ নম্বর দাগে প্রভাবশালী জনৈক রমজান আলী পাঁচতলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান জানান, উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনসাধারণের সাথে কথা বলার জন্য সরকার তাকে মোবাইল সরবরাহ করেননি, কাজেই তিনি সাধারণ মানুষের ফোন ধরেননা।
ভালুকা রেঞ্জ এলাকায় বনায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: হারুন উর রশীদ খান এই বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস থেকে তথ্য নেয়ার পরামর্শ দেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আ,ন,ম আবদুল ওয়াদুদ জানান, উল্লেখিত অনিয়ম ও মামলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com