প্রকাশিত হয়েছেঃ জুন ৩, ২০২৪ সময়ঃ ৭:৩৭ অপরাহ্ণ

আসাদুজ্জামান ভালুকা (ময়মনসিংহ)।।
ময়মনসিংহের ভালুকায় সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় ওটিতে সুমাইয়া আক্তার (৩২) নামে এক প্রসূতির মারা যাওয়ার পর নিহতের লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে রেখে ইউপি চেয়ারম্যান ও পাগলা থানা সেকেন্ড অফিসারের উপস্থিতিতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক মালিকের প্রতিনিধিদের সাথে ৪ লাখ টাকা রফা হয়। পরে রোববার রাত ১২টায় সুমাইয়ার লাশ দাফন করা হয়।
জানা যায়, শনিবার দুপুরে পাগলা থানার মাখল গ্রামের ইসলাম মিয়ার স্ত্রী গর্ভবতী সুমাইয়া আক্তারকে ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত অনুমোদনহীন মাস্টারবাড়ি পপুলার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় ওটিতেই বিকালে মারা যান সুমাইয়া। ডা. মাজহারুল ইসলাম রোগীকে অজ্ঞান করার পর ডা. আহসান হাবিব সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এ সময় সুমাইয়া একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ওটিতে মারা যাওয়ার সন্দেহ হলে রোগীকে দেখার জন্য স্বজনরা বারবার চেষ্টা করলেও সুমাইয়কে দেখতে দেয়া হয়নি। এ সময় সুমাইয়ার শ^শুর ওই ক্লিনিকে লাশ রেখেই হট্টগোল শুরু করেন। হাসপাতালের পরিচালক মেহেদী হাসান লিপু ও হাসপাতালের ভবন মালিক মফিজ উদ্দিন সুমাইয়ার শ^শুর আসাদ মিয়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে লাশ তাদের বাড়িতে পাঠান। লাশ নেয়ার পর স্থানীয় লোকজন লাশবাহী অ্যা¤ু^লেন্সের মালিক আব্দুল হালিমকে স্থানীয় লোকজন আটক করেন। রাতে গাজীপুর থেকে লাশ বহনকারী ফ্রিজিং নিয়ে লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে সংরক্ষণ করা হয়। ফ্রিজিং গাড়িতে লাশ রেখে রাতভর দরবার হয়। রোববার সকালে ক্লিনিকের ভবন মালিক পল্লী পশু ডাক্তার মফিজ উদ্দিন পাগলা থানাধীন নিগুয়ারী ইউনিয়নের মাখল গ্রামে নিহতের বাড়িতে সমঝোতার জন্য উপস্থিত হন। ওই সমঝোতার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাগলা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই পলাশ ব্যানার্জি, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুদ্দিন মৃধা, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নান্নু মিয়াসহ নিহতের স্বজন ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। রোববার বেলা ১২ টা পর্যন্ত কোনো সমঝোতায় উপনিত না হওয়ায় নিহতের স্বামী ইসলাম মিয়া, শ^শুর আসাদ মিয়া ও স্বজনরা ভালুকা মডেল থানায় আসেন লিখিত অভিযোগ দেয়ার  জন্য। মডেল থানার ওসি তাদের বক্তব্য শুনে ওসি (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনাস্থলে পাঠান। পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর নিহতের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিলে তারা অভিযোগ না দিয়েই বাড়িতে চলে যান। বাড়ি গিয়ে পূনরায় সমঝোতার বৈঠকে বসেন। অবশেষে ৪ লাখ টাকা রফা হওয়ার পর (রোববার) ১২টায় নিহতের লাশ তাঁর স্বামীর বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহতের এক স্বজন জানান, চেয়ারম্যান, মেম্বার নেতৃত্বে ও থানা সেকেন্ড অফিসারের উপস্থিতিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নিহতের দুই সন্তানকে ৪ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর রাত ১২ টায় লাশ দাফন করা হয়েছে।
পাগলা থানার সেকেন্ড অফিসার পলাশ ব্যানার্জি জানান, অপারেশনে এক প্রসূতি মারা যাওয়ার পর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে জানালে আমি ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ৪ লাখ টাকায় রফার বিষয়টি আমার জানা নাই।
নিগুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান তাইজুদ্দিন মৃধা জানান, হাসপাতালের ভবন মালিকসহ বিবাদীপক্ষ তার কাছে আপসের জন্য আসছিলো, তবে রাতে কি ফয়সালা হয়েছে তার তার জানা নেই।
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসানুল হোসেন জানান, তিনি ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে আছেন। বিষয়টির ব্যাপারে জানার জন্য স্যানেটারী ইন্সপেক্টরকে ঘটনাস্থলে পাটিয়েছিলাম। ঘটনার সত্রতা পাওয়া গেছে, তিনি ঢাকা থেকে এসে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
ভালুকা মডেল থানা পরিদর্শক (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ জানান, নিহতের পরিবারের লোকজন রোববার থানায় আসার পর তাদের কথা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলা হলেও, অভিযোগ না দিয়ে তারা চলে যায়।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com