প্রকাশিত হয়েছেঃ মে ৩১, ২০২১ সময়ঃ ১০:১১ অপরাহ্ণ

Spread the love

আসাদুজ্জামান ফজলু, দিগন্তবার্তা:-

ময়মনসিংহের ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের এক কিলোমিটারের ভেতর উপজেলার বাটাজোর বাজারে ৮/১০ টি অবৈধ করাতকলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা করাতকলে অবাধেভাবে চেরাই হচ্ছে বিশাল বিশাল শাল-গজারি ও আকাশমনি গাছের কাঠ। এসব করাতকলে একটি সঙ্ঘবদ্ধ গাছ পাঁচারকারীদল রাতের আধাঁরে অব্যাহতভাবে সরকারি বনের গাছ কেটে নেয়ার ফলে উজাড় হচ্ছে কাদিগড় জাতীয় উদ্যান ও হবিরবাড়ি এলাকার গজারি বনসহ বিভিন্ন এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভালুকার কাচিনা ইউনিয়নের কাচিনা, বাটাজোর বাজার, মল্লিকবাড়ি, মাস্টারবাড়ি, কাশরগড়,মল্লিকবাড়িমোগ ও মল্লিকবাড়ি বাজার, উথুরা রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন, উথুরা বাজার, চামিয়াদী বাজার, কৈয়াদী বাজার,ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড এলাকা,আঙ্গারগাড়া ও ডাকাতিয়া চৌরাস্তা বাজার এলাকার অর্ধশতাধিক লাইসেন্সবিহীন করাতকলে দিনরাত চলে শাল-গজারি ও আকাশমনি কাঠ চেরাই। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবাধে এসব গাছ কাটা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, বৃক্ষসম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধা উন্নয়নের জন্য সরকার বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন ১৯৭৪-এর ২৩(৩) ধারার আওতায় ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর এক আদেশবলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের পালগাঁও এলাকায় ৮৫০ একর ভূমির সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে কাদিগড় জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। এখানে রয়েছে পুরনো শাল-গজারি গাছের অপরূপ সবুজের সমারোহ। জাতীয় উদ্যান হিসেবে ওই এলাকাটি চিহ্নিত হওয়ার পর তা সংরক্ষণে সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়। কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে একটি চক্র উদ্যানের গাছ কাটা শুরু করে। চক্রটি রাতে উদ্যান এলাকা থেকে গজারি গাছ কেটে ঘোড়ার গাড়ি ও বিভিন্ন যানবাহনে করে পার্শ্ববর্তী বাটাজোর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন করাতকল মালিকদের কাছে পৌঁছে দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কাদিগড় মৌজার ৩৮৩ নম্বর দাগে তালাব দক্ষিণপাড়া মরাপুড়া ব্রীজের উত্তর ও পিশ্চিমে বেশ কয়েকটি চালা থেকে বিশাল বিশাল গজারী গাছ কেটে চুরি করে নিচ্ছে একটি চক্র। নাম প্রকাশ না করার সর্তে এলাকাবসি জানান,স্থানীয় খোকা ও লাহু নামে দুই ব্যক্তি এসব চালা থেকে গজারী গাছ কেটে নিয়ে উজাড় করছে এবং এসব ফাঁকা জমি দখল করে বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন ফসলাদির বাগান করছেন। স্থানীয়রা আরো জানান, ওই দুই ব্যক্তি প্রথমে ওসব চালার বড় বড় গজারী গাছের নিচু অংশের চামড়া তুলে ফেলেন এবং গাছটি মারা গেলে তা কেটে নিয়ে অবৈধ করাতকলে ড়োই করে অন্যত্র বিক্রি করেন।

বন আইনে বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও কাদিগড় বনাঞ্চল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে কাচিনা বাজার ও আড়াই কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজার এলাকায় ২০টি লাইসেন্সবিহীন করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব করাতকলে উদ্যানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ চেরাই করা হয়। কাদিগড় বন বিট অফিস থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজারে আতিক মণ্ডল,পলাশ তালুকদার, সেলিম তালুকদার, ইমরুল তালুকাদার, জাহাঙ্গীর মেম্বার, নয়ন মিয়া ও পাপনের মালিকানাধীন অবৈধ করাতকল ছাড়া আরো সাত-আটটি করাতকলে প্রকাশ্যেই চেরাই করা হচ্ছে বনের গাছ। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এ কর্মজজ্ঞ চলে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বন বিভাগের কর্তারা বলছেন, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। শুধু কাচিনা আর বাটাজোরই নয়, জাতীয় উদ্যানের মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে তামাট বাজারে শাহীন মেম্বারের মালিকানাধীন করাতকলসহ তিনটি করাতকলে রাতদিন বনের গাছ চেরাই করা হয়। ক্রমাগত গাছ কাটার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য ও ধ্বংস হচ্ছে জাতীয় সম্পদ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন আগেও উদ্যান এলাকায় মেছোবাঘ, লজ্জাবতী বানরসহ কয়েক প্রজাতির প্রণী উন্মুক্ত করা হলেও বন উজাড় হওয়ায় এদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে অবৈধ করাতকল মলিক ও কাঠ পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক করাতকল মালিক জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমনকি প্রতি মাসে এক হাজার টাকা সেলামী দিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর উদ্যোনের গাছ কেটে চেরাই করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এলাকার প্রত্যেক স’ মিল মালিকদের নিজস্ব ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। তাই এসব চোরাই কাঠ সহজেই ফার্নিচারের দোকানে ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র জানায়, কাদিগড় বন এলাকার বাইরে মল্লিকবাডি মোড় ও বাজার এলাকায় সাতটি, মাষ্টারবাড়ি বাজার, কাশর গড়, জামিরদিয়ার সীমান্তবর্তী, ঝালপাজা রোড, ভরাডোবা, চামিয়াদি বাজারে আব্দুস সামাদসহ আট, বোর্ড বাজারে এক, পারুলদিয়া বাজারে এক, বিরুনিয়া মোড় ও বাজারে ছয় এবং ভালুকা পৌর এলাকায় সাতটিসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বেশ কয়েকটি অবৈধ করাতকল রয়েছে, যেগুলোয় চলে বনের কাঠ কাটার মহোত্সব। এসব কাঠ শুধু ফার্নিচারের দোকানেই নয়, এর একটি অংশ ব্যবহার করা হয় স্থানীয় ইটভাটাগুলোয়। উপজেলায় প্রায় ১৭ টি ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোয় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হয়। আর এসব কাঠের জোগান আসে অবৈধ এসব করাতকল থেকে।

এ ব্যাপারে কাদিগড় বিট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান    জানান,সম্প্রতি ময়মনসিংহ র‌্যাব ১৪ এর মাধ্যমে অভিযান করে বেশ কিছু অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আবারো অভিযানের ব্যাপারে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন, বনের গাছ কাটা রোধে এরই মধ্যে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। আবারো অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com